
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাপদক ২০২৩ এ রাঙামাটি পার্বত্য জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত
মনিরা পারভীন (মনি পাহাড়ি)।
১৮সেপ্টেম্বর, সোমবার রাঙামাটি পার্বত্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে গত সপ্তাহেই ২০২৩ সালের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতায় রাঙামাটি সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক (মহিলা)” নির্বাচিত হয়েছিলেন গতি থিয়েটারের সভাপতি মনিরা পারভীন (মনি পাহাড়ি)
সেই ধারাবাহিকতায় এবার হয়েছেন রাঙামাটি জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক -২০২৩।
সোমবার সংবাদটি নিজের ফেসবুকে সকলকে জানিয়ে মনিরা পারভীন বলেন, অনেক অনেক গুণী শিক্ষকের মাঝে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ এ রাঙামাটি জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হওয়াটা বিস্ময়কর ও আনন্দের।
অফিসিয়াল রেজাল্ট জেনেছি, প্রাপ্তিটা মূলত আমার শিক্ষার্থীদের, কৃতজ্ঞতা আমার।
তিনি আরও লিখেন, উত্তর কুতুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকর্মীবৃন্দের প্রতি, যাঁরা বিচক্ষণতার সাথে নির্বাচন করেছেন তাঁদের প্রতি, কৃতজ্ঞতা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ, রাঙামাটি পিটিআই ও শিক্ষা বিভাগের সকলের প্রতি যাঁরা কিছু ক্ষেত্রে আমার চেয়ে আমাকে ভালো চেনেন।
রাঙ্গামাটি জেলাসহ সারাদেশের সবগুলো জেলার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের সকলকে অভিনন্দন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পর্যায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মনিরা পারভীনের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি মনি পাহাড়ী নামেই বেশি খ্যাত। তিনি জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘মনপুর‘র সহকারী পরিচালক ছিলেন। শিক্ষকতা পেশায় আসার পূর্বে তিনি চাকরি করছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এসএটিভি এবং নাগরিক টেলিভিশনে।
ছাত্রজীবন থেকেই থিয়েটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে
২০০৩ সাল থেকে তিনি ইউনিসেফ এর “আনন্দময় স্কুল “প্রজেক্টে ফ্রিল্যন্স প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন ৬৪ জেলার নাট্যকর্মী ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে।
পরবর্তীতে তিনি কিশোর-কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্য প্রজেক্টে ইউএনএফপিএ -তে চুক্তিভিত্তিক কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন।
মনিরা পারভীন এর “আলোর মানুষ তুমি” নামক একটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। এছাড়া গবেষণামূলক প্রযোজনা “সহস্রাব্দের পাঁচালী”, থিয়েটার এর উপর ধারাবাহিক প্রবন্ধ ” থিয়েটার-ভ্রুণ থেকে বৃক্ষ”, সচেতনতামূলক নাটক, প্রামান্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট “বাহার বাহারে” সহ লেখার ক্ষেত্রে বেশ সুনাম রয়েছে তাঁর। মনিরা পারভীন এর ভাবনা ও পরিকল্পনায় বহু টিভি অনুষ্ঠান রয়েছে যা বহুল আলোচিত ও বেশ সমাদৃত।
একেবারে ছোটবেলা থেকে অভিনয়, আবৃত্তি, নৃত্য, উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক, বই পড়া প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, দাবা খেলাসহ নানান ক্ষেত্রে তাঁর বহু পুরস্কার রয়েছে। তাঁর উপস্থাপনশৈলীতে তথ্য ও সেন্স অব হিউমারের সংমিশ্রণ সকলের মন জয় করে নেয়।
মনিরা পারভীন জাতীয় পর্যায়ের নাট্যদল “গতি থিয়েটার” এর সভাপতি। এই দলটি বিগত আট বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুদান পেয়ে আসছে। দেশের বাইরে উল্লেখযোগ্য বহু নাট্যোৎসবে তিনি অংশ নিয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে আরণ্যক নাট্যদলের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রীয় সফরে দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ করেন।
মনিরা পারভীন বিবিসি মিডিয়া একশন এর চুক্তিভিত্তিক ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তাছাড়া তিনি রেডিও বাংলাদেশ ঢাকা’র গ্রেড “এ” এর তালিকাভুক্ত অভিনয়শিল্পী।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পাশাপাশি সামাজিক, মানবিক ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ মনিরা পারভীন আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন হতে একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন।
মনিরা পারভীন জীবনে যেখানে কাজ করেছেন সেখানেই সুনাম অর্জন করেছেন তাঁর সৃজনশীলতা, নিবিষ্টতা ও বুদ্ধিমত্তার জন্য। শিক্ষাক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় হয়নি। তিনি তাঁর মেধা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিবিড় যত্ন ও মমতায় গড়ে তুলছেন শিক্ষার্থীদের যা সুন্দর বর্তমান ও ভবিষ্যতের বার্তা দেয়।