
গত বছর ৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রামে যোগদান করেন তারুণ্যদীপ্ত এই প্রশাসক। যোগদানের পর থেকেই সৃজনশীল ও উদ্যোমী ব্যক্তি হিসেবে নজর কাড়েন নগরবাসীর। শুধু কি তাই একের পর এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে ইতোমধ্যে ভূয়সী প্রশংসাও কুড়িয়েছেন মেধাবী এই আমলা। যোগদানের পর থেকেই চট্টগ্রামের মানুষ তার বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষী হয়েছেন প্রতিটি মূহুর্তে। ম্বাক্ষী হয়েছেন সাহসী নানান উদ্যোগেরও। সৃজনশীল মানুষ হিসেবে চট্টগ্রামে মেধার রঙ ছড়াচ্ছেন আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের স্বর্গরাজ্য থেকে ১৯৯ একর সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে সেখানে তৈরি করেছেন দৃষ্টি নন্দন পার্ক।
নগরবাসী ও সংবাদকর্মীরা ভালোবেসে সে পার্কের নাম দিয়েছেন ডিসি পার্ক। জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে পার্কটিতে এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশি-বিদেশি বাহারি সব ফুল নিয়ে ১০ দিনব্যাপী ফুল উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। বিটিআরসির তথ্য মতে, ১০ দিনব্যাপী ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার দর্শনার্থী গিয়েছিল ডিসি পার্কে।
চট্টগ্রামে যোগদান করে তিনি চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের সুযোগের অভাবের বিষয়টি অনুধাবন করে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পর্যটকদের জন্য নিউমার্কেট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত চালু করেছেন পর্যটক বাস এবং জেলা প্রশাসকের সর্বশেষ সংযোজন ফুল ডে ট্যুর সার্ভিস।
এ সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস সার্ভিস ছিল না। অধিকাংশ পর্যটক সিএনজি, অটোরিকশা ভাড়া করে যেতেন। এতে করে সমুদ্র সৈকতগামী পর্যটকদের ভোগান্তির পাশাপাশি অনেক ভাড়া গুণতে হতো। চট্টগ্রামের পর্যটনপ্রেমী মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের সহায়তায় পতেঙ্গাগামী পর্যটকদের জন্য জন্য দুইটি ডাবল ডেকার বাস চালু করা হয়।
বাস দুইটি গত ১০ জুন থেকে টাইগারপাস-ডিসি পার্ক (ফৌজদারহাট)-পতেঙ্গারুটে চলাচল শুরু করে। ডাবল ডেকার বাস দুটির মধ্যে একটি ছাঁদখোলা, যেখানে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে পর্যকটরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতগামী বায়েজিদ লিংক রোড়ের দুই পাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভের মনমাতানো সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে সৈকতে পৌছতে পারেন।
বাস দুটির ২টি ট্রিপ রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে নিউমার্কেট ছেড়ে যায় এবং টি ট্রিপ আবার নিউমার্কেট ফিরে আসে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ট্রিপের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি থাকে। শুক্রবার মোট ৩টি ট্রিপ নিউমার্কেট ছেড়ে যায়, আবার ৩টি ট্রিপ ফিরে আসে। শনিবার সকাল ও বিকেল মিলিয়ে মোট ৪টি ট্রিপ শহর ছেড়ে যায় এবং ৪টি ট্রিপ ফেরত আসে।
পর্যটন বাসে সকল আয়ের মানুষের সামর্থ্য বিবেচনা করে বিআরটিসি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কম ভাড়া রাখা হয়েছে। টাইগারপাস হতে ডিসি পার্ক পর্যন্ত ৪০ টাকা, ডিসি পার্ক হতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ৩০ টাকা, টাইগার পাস হতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
পর্যটক বাস চালু হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। বাস দুইটি চালু হওয়ার কয়েকদিন পর থেকে প্রায় প্রতিদিন ধারণক্ষমতার বেশি সংখ্যক যাত্রী চলাচল শুরু করে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়ে যায়। যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিকালে বহরে আরও দুইটি করে বাস যোগ করেন জেলা প্রশাসক।
গত ১ জুলাই থেকে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার উন্নত বিশ্বের আদলে চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের বিকাশে জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে আরো একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে চালু করা হয় ফুল ডে ট্যুর সার্ভিস। এই ট্যুর সার্ভিসের মাধ্যেমে প্রাথমিকভাবে পর্যটকগণ সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক (সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা), গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, মহামায়া লেক এবং ডিসি পার্ক ভ্রমণ করছেন।
ফুল ডে ট্যুর সার্ভিসের মাইক্রোবাসগুলো চট্টগ্রামের শহরের প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেটে অবস্থিত মোটেল সৈকত এর সামনে থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে এবং সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে মোটেল সৈকতের সামনে ফিরে আসে।
মাত্র ৮৫০ টাকার প্যাকেজটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাস সার্ভিসের পাশাপাশি সকালের স্ন্যাকস, দুপুরের খাবার ,সার্বক্ষণিক ট্যুর গাইডের সুবিধা আছে। পর্যটক বাসের মতো ফুল ডে ট্যুর সার্ভিসও চট্টগ্রামের ভ্রমণপিপাসু মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অচিরেই রাঙ্গুনিয়া, বাশখালী , আনোয়ারা ও ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে এ ধরনের ফুল ডে ট্যুর চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনমূলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও পারকীসহ জেলার সকল সমুদ্র সৈকতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং অনান্য পর্যটন এলাকার উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সমন্বয়ের নিমিত্ত “বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি”র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি হিসেবে জেনা প্রশাসক চট্টগ্রাম জেলার সমুদ্র সৈকতসহ সকল পর্যটন এলাকার উন্নয়নে বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারী অংশীজনদের নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘিরে যত্রতত্র বিদ্যমান বিভিন্ন অস্থায়ি অবকাঠামো সমূহকে আকর্ষনীয় ও জনবান্ধব করে তোলার জন্য বীচ এলাকায় ফুড জোন, কিডস জোন, পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন জোনিং এ ভাগ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বাণিজ্যিক নগরীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রাকৃতিকভাবেও সমৃদ্ধ। প্রকৃতির অসীম এই সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি সেই কাজটিই করছি যা চট্টগ্রামকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসনের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজ ও পর্যটন নিয়ে খোলা নতুন একটি ফেইসবুক পেইজে পর্যটক বাস ও ফুল ডে ট্যুর নিয়ে নিয়মিত হালনাদগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। পর্যটক বাস এবং ডে ট্যুরে ভ্রমনেচ্ছু পর্যটকদের সুবিধা বিবেচনা করে পর্যটক বাস ও ডে ট্যুর বুকিং, আসন বুকিং, অনলাইনে ভাড়া ও সেবা চার্জ পরিশোধের জন্য Payment Gateway সমৃদ্ধ একটি Web Application প্রস্তুতও করা হয়েছে।
সিএস