22 C
Chittagong
মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদবাতিঘরবছর তিন পেরিয়ে গেলেও মানবিক মাহবুবর রহমানকে ভুলেনি চট্টগ্রাম

বছর তিন পেরিয়ে গেলেও মানবিক মাহবুবর রহমানকে ভুলেনি চট্টগ্রাম

  জালালউদ্দিন সাগর

২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পেশাগত কারণে চট্টগ্রাম ছেড়ে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মাহবুবর রহমান রিপন। প্রায় তিন বছর আগে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও চট্টগ্রামের মানুষ এখনো ভুলেননি বাংলাদেশ পুলিশের মানবিক এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।

আজ ০৩ অক্টোবর তাঁর জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুভেচ্ছার বন্যা তাঁর অনন্য কর্মের ভালোবাসার রূপান্তর বলে মনে করছেন নগরবাসী।

বাংলাদেশ পুলিশের মানবিক এই কর্মকর্তাকে শুভেচ্ছা জানানোর তালিকায় সাধারণ মানুষ যেমন আছেন তেমনি ছিলেন রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরাও। বাদ পড়েনি ক্রীড়াবিদ, সাহিত্যানুরাগী এবং শিক্ষার্থীরাও।

নগরবাসী অনেকেই ফেসবুকে লিখেছেন, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে তো অনেকেই দায়িত্বপালন করেছেন কিন্তু কতজনকেই মনে রেখেছে এই চট্টগ্রাম। কিংবা কতজনই বা মনে দাগ কাটার মতো কাজ করেছে। মাহবুব ভাই আপনি ব্যতিক্রম। আপনার হাত ধরেই বাংলাদেশ পুলিশের মানবিক পুলিশ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। আপনার হাত ধরেই সিএমপি পৌঁছেছিল অনন্য এক উচ্চতায়। জন্মদিনের শুভেচ্ছা আপনাকে।

২০১৮ সালের ২৭ মে সিএমপিতে কমিশনার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মাহাবুবর রহমান রিপন। সিএমপিতে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মানবিক পুলিশ কমিশনার হিসেবে খ্যাত ছিলেন জামালপুর রজলার মাদারগঞ্জ থানার চর পাকেরদহ গ্রামের মৃত মো. মোজাম্মেল হক আর মমতাজ বেগমের সন্তান রিপন।

করোনাকালীন সময়ে তাঁরই হাত ধরে সিএমপিতে অন্যরকম এক পুলিশ বাহিনী দেখেছে চট্টগ্রামের মানুষ। শুধু কি তাই, নিজে ও পরিবারের সদস্যরা বারবার করোনা আক্রান্ত হলেও পিছু হটেনি তার বাহিনী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, কখনো সখনো পালিয়ে যাওয়া রোগীকে ধরে আনা, করোনা আক্রান্তের বাসা, ভবন ও এলাকা লকডাউন করা, ত্রাণসামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়াসহ গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার মতো মানবিক সব কাজ করে নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছিলো পুলিশ। যার নেতৃত্বে ছিলেন মাহবুবর রহমান।

করোনা রোগীদের জন্য প্লাজমা ব্যাংক,পথেঘাটে জীবানুনাশক ছিটানো, মুমূর্ষ রোগীর যাতে শ্বাস নিতে কষ্ট না হয় সেজন্য বেশ কয়েকটি আইসোলেশন সেন্টারে অক্সিজেন সিলিন্ডার ইত্যাদি দিয়ে মুমূর্ষ রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আর সবই যেনো দায়িত্বের অংশ হয়ে ওঠেছিলো সিএমপির। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ধারাবাহিকতা সামাল দিয়ে সিএমপি হয়ে ওঠেছিলো নগরবাসীর ত্রাতা।

বিত্তবানদের অনুদানসহ নিজস্ব তহবিল থেকে হাজার হাজার বস্তা খাদ্য সামগ্রী মানুষের দরজায় পৌঁছে দিয়েছিলো সিএমপি। এই জন্য কাউকে আসতে হয়নি থানাতে, দাঁড়াতে হয়নি রাস্তায়-লাইনেও।

সে সময় সাহায্য নেওয়া মানুষের তালিকায় নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন ছিলেন তেমনি ছিলেন মধ্যবিত্তরাও। মানুষের অসহায়ত্বের কথা বুঝে ত্রাণ নেওয়া সে সব মানুষের নামগুলো তিনি গোপন রেখেছিলেন যত্ন করে।

চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমানের কথা বলতে গিয়ে বর্তমান পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান আমার পরম বন্ধু। গতানুগতিক কাজের বাহিরে গিয়ে উদ্ভাবনী কাজ করার ঝোঁক তাঁর সব সময়েই ছিলো। যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই সবার নজর কেড়েছেন। মহামারী করোনার সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রামের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। করোনাকালে মানুষের পাশে থাকতে গিয়ে তিনি নিজেও পরিবারসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পিছুটান দেননি। এমন একজন মানবিক মানুষের জন্য আমার সব সময় শুভ কামনা রইলো।

তিনি বলেন, যার মানবিকতার দ্যুতি ছড়ানো চট্টগ্রামবাসী অন্যরকম এক সিএমপিকে দেখেছিলো করোনাকালে তার কাণ্ডারি ছিলেন মাহবুবর রহমান রিপন।

সর্বশেষ