
১২ মার্চ-২০২৩। আশি পেরিয়ে একাশিতে পা দিলেন দেশ বরেণ্য শিল্পপতি, কোটি মানুষের আইডল , তারুণের পথপদর্শক একুশে পদক প্রাপ্ত সুফি মিজানুর রহমান। শুধু সুফিজম কিংবা ব্যক্তি হিসেবেই নন তারুণ্যের কাছে সুফি মিজানুর রহমান একটি প্রতিষ্ঠান। যাঁর কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আশা প্রতিটি শব্দ ধারন করেন, লালন করেন কোটি কোটি যুবক। তাঁরই দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটতে ভালোবাসেন এই প্রজন্ম।
সুফি মিজানুর রহমানের বড় সন্তান মোহাম্মদ মহসিন বাবা সম্পর্কে নিজের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলেন, শুধু আমরাই নয় এই দেশের লাখো-কোটি যুবক সুফি মিজানুর রহমানকে পথপদর্শক মনে করেন। দীর্ঘ জীবনে সুফি মিজানুর রহমানের চলার পথ খুব মসৃণ ছিলো না। জীবনের প্রতিটি মূহুর্তের সাথে লড়াই করে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁচ্ছেছেন। জীবনের প্রতিটি ধাপে বাবা যতটুকুই শিখেছেন সবটুকুই তারুণ্যের জন্য উৎসর্গ করেছেন। বাস্তব জ্ঞানের মহাসমূদ্র সুফি মিজান। যোগ করেন মহসিন।
সুফি মিজানুর রহমান একাত্তর পরবর্তী সময়ে ব্যবসা শুরু করেন চট্টগ্রাম। এর আগে তিনি একটি ব্যাংকে সামান্য বেতনের চাকরি করতেন। অর্ধশত বছরে ব্যবসায়ি হিসেবে তিনি শুধু তাঁর নিজেকেই গড়েন নি। তিনি গড়েছেন সন্তানদেরও। শিক্ষা ও জ্ঞানে সুফি মিজানের ৮ সন্তান আজ ঈর্ষণীয়।
ব্যবসায়ি হিসেবে সুফি মিজানের অর্ধশত বছরের পথচলায় কর্মসংস্থান প্রায় ১০ হাজার মানুষের। এই দশ হাজার মানুষের ওপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করছেন লাখো পরিবার।
তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা টার্নওভার করলেও মানবিকতা ও মনুষ্যত্বকে কখনোই ভুলে যাননি সুফি মিজান দিনে দিনে ব্যবসায়িকভাবে তিনি যতই বড়ই হয়েছেন। যতই ব্যাপ্তি বেড়েছে তাঁর। ততই সমৃদ্ধ হয়েছেন মানবিক উজ্জ্বলতায়-এমনটাই দাবি সুফি মিজানুর রহমানের আরেক সন্তান আমীর হোসেন সোহেলের। তিনি বলেন, বাবা প্রায়শ্চই বলেন, ‘শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হয় পাঁপড়ির মতো। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা তুমি যদি শুধু তোমার মধ্যেই বেঁধে রাখো তোমার মতই কোনো একদিন তারও মৃত্যু হবে। যদি বেঁচে থাকতে চাও তোমার অর্জন কোটি প্রাণে ছড়িয়ে দাও।’ সোহেল বলেন, বাবা শুধু আমাদের কাছেই নন তিনি কোটি তারুণ্যের আলোকবর্তিকা।
আমীর হোসেন সোহেল এই প্রতিবেদককে বলেন, বাবাকে নিয়ে আমার লেখা একটি কবিতার শেষ চারটি লাইন এমন,
সুফি মিজানরা মাসে মাসে জন্মায় না
সুফি মিজানরা যুগে যুগেও জন্মায় না
সুফি মিজানরা জন্মায় শতাব্দীতে দু-চার জন।
আমরা অতীব ভাগ্যবান,
আমাদের মাঝে উপস্থিত সুফি মিজান একজন।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিল্প-বাণিজ্যের ডালপালা ছাড়ানো সুফি মিজানের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে। তবে চট্টগ্রামেই তার স্থায়ী নিবাস। ৮১ বছরে পা দেওয়া সাদামাটা মানুষটি শুধু দেহেই নয় মনেও বড় হয়েছেন দ্যুতি ছড়ানো সুফিয়ানায়। যারা তাকে খুব কাছে থেকে চেনেন, তারা জানেন ধর্মপ্রাণ সুফি মিজান বছরের অধিকাংশ দিনই রোজা করেন। আর খাবারের তালিকাও অতি সাধারণ। সদা হাস্যোজ্জ্বল বিনয়ী একজন মানুষ সুফি মিজান।
লোকমুখে শোনা যায়, কোনও সাক্ষাতে সুফি মিজানের আগে কখনো তাকে কেউ সালাম দিতে পারে না, তিনিই আগে সালাম দিয়ে হাত বাড়ান। অনেক বড় শিল্পপতি হয়েও তাঁর সাধারণ কিছু গুণ তাকে সাধারণের কাছে অসাধারণ একজন মানুষ প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সাত ছেলে, এক মেয়ের জনক তিনি। ছেলেদের মধ্যে চার জন অস্ট্রেলিয়া এবং বাকি তিন জন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই বিদেশে স্থায়ী নিবাস গড়েননি। দেশে ফিরে বাবার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর হাল ধরেছেন। ছেলেরা নতুন নতুন শিল্প গড় বাবার প্রচেষ্টাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন। তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছেন সুফি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম ভিক্টর মহসিন।
সহধর্মিনী তাহমিনা রহমান ছাঁয়ার মতোই পাশেপাশে থাকেন সুফি মিজানের সাথে। অনুপ্রেরণা দেন, দেন পরামর্শও। সেকারণে স্ত্রী তাহমিনাকে ‘মহিয়সী নারী’ বলেই সম্মোধন করেন সুফি মিজান।
বাবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুফি মিজানুর রহমানের অপর সন্তান আকতার পারভেজ হিরু বলেন, বাবার কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে বাবার কাছ থেকে আমি শিখেছি-এখনো শিখি।
তিনি আরও বলেন, সুফি মিজান তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়। কারণ তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনাতে ভালোবাসেন।