
চট্টগ্রাম থেকে ঝিকঝিক শব্দে ঝিনুকের দেশে ছুটে চলা ট্রেনের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫৫ টাকা। সর্বোচ্চ ভাড়া ৬৯৬ টাকা। আর রামু থেকে কক্সবাজার ৫ টাকা। চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার এবং রামুর সাথে কক্সবাজারের যোগাযোগখাতে তাক লাগানো এমন ভাড়া যেন সকলের ‘চক্ষুচড়ক গাছ’। আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুইসেলে কক্সবাজারের রেলের নেটওয়ার্ককিংয়ে যুক্ত হয়েছে ঢাকাসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগখাত।
ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে বইছে উৎসবের আনন্দ। পর্যটন নগরীতে ট্রেনের আগমন যেন বিশ্বাসই করতে পারছেননা কক্সবাজারের বাসিন্দারা। শুধুই কি কক্সবাজার- কক্সবাজারের সাথে কম ভাড়ায় রামুর সাথে অভাবনীয় যোগাযোগ, যা কখনই ভাবতে পারেনি রামু, টেকনাফ বাসিন্দারা। তারা বলছেন, রামু থেকে কক্সবাজার যেতে যেখানে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগত সেখানে ৫ টাকায় কক্সবাজার যাওয়া যাবে ভাবতে কেমন লাগছে।
রামুর স্থায়ী বাসিন্দা ওয়াহিদ বলেন, বর্তমান সরকারের রেল নেটওয়ার্কের বিস্তার সারাদেশে। পর্যটন নগরীতে পর্যটকরা আসা-যাওয়ায় বিশেষ করে যাতায়াতখাতে আর ভোগান্তীতে পড়তে হবে না। তেমনি রামুবাসীরা যেভাবে সাধারণ পরিবহনের কাছে ভাড়া নিয়ে জিম্নি ছিলো তা থেকে মুক্তি পাবে।
এদিকে, পর্যটকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের সঙ্গে তৈরি হয়েছে রেল যোগযোগ। বন্দর নগরী থেকে ট্রেনে কক্সবাজারে যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫৫ টাকা, আর সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা নির্ধারণ করেছে রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগ। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা। মেইল ট্রেনে এই ভাড়া হবে ৭০ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনের ক্ষেত্রে ৮৫টাকা।এছাড়া সুলভ শ্রেণির আসনের ভাড়া হবে ১০৫ টাকা, শোভন শ্রেণির ভাড়া ১৭০ টাকা, শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা এবং প্রথম চেয়ার (সিটের) ভাড়া ৩১১ টাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথম বার্থের টিকেট ৪৬৬ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৪৬৬ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া জনপ্রতি ৬৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এই পথে ছয়টি সেতুর জন্য ৩৮ দশমিক ১৩ কিলোমিটার বাড়তি দূরত্ব ধরা হয়; যাকে রেলের ভাষায় পন্টেজ চার্জ বলা হয়। সে হিসেবে এ পথের বাণিজ্যিক দূরত্ব ১৮৯ কিলোমিটার। বর্তমানে ট্রেনে প্রতি কিলোমিটারের জন্য এসি শ্রেণির নির্ধারিত ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা এবং নন এসি শ্রেণির জন্য ১ টাকা ১৭ পয়সা। তবে দেশে চালু থাকা লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর এই চার রকম ট্রেনের জন্য ভাড়ার হারে কিছুটা তারতম্য আছে।
রেল সচিব হুমায়ন কবির জানান, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া হবে (নন এসি মেইল ট্রেনে) ১৮৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ওই ট্রেনের এসি বার্থে জনপ্রতি ১ হাজার ৭২৫টাকা। আগামী ১ ডিসেম্বর শুধু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। পরে কমিউটার ও মেইল ট্রেনও চালু হবে। ভবিষ্যতে এই রুটে পর্যটক কোচ চালু করা হবে। শুধু ঢাকা নয়, উত্তরাঞ্চল ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও কক্সবাজারে রেলপথে আসা যাবে। এতে যোগাযোগের নতুন পথ উন্মোচন হবে।
বাংলাদেশ রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, দিনে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করবে। ১৫টি বগি নিয়ে ঢাকা থেকে যাত্রার সময় এই ট্রেনে আসন সংখ্যা হবে ৭৯৭টি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা নতুন আধুনিক কোচ দিয়ে লাল-সবুজ রঙে সাজানো হয়েছে ট্রেনটি।
এদিকে রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। নতুন নির্মিত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ ট্রেনে অতিক্রম করতে লোকাল ট্রেনের ভাড়া পড়বে মাত্র ৪০ টাকা। মেইল ট্রেনে তা ৫৫ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনে সেই ভাড়া ৬৫ টাকা।
এছাড়া দোহাজারী-কক্সবাজার পথে সুলভ শ্রেণির আসনের ভাড়া হবে ৮০ টাকা, শোভন শ্রেণির ভাড়া ১৩০ টাকা, শোভন চেয়ারের ভাড়া ১৫৫ টাকা এবং প্রথম চেয়ার (সিটের) ভাড়া ২৩৬ টাকা। আর দোহাজারি-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথম বার্থের টিকেট ৩৫৭ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ২৯৯ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৩৫৭ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া জনপ্রতি ৫৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন এই রেলপথের মধ্যবর্তী নয়টি স্টেশনের ভাড়া অনুমোদন করেছে রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বাসের ভাড়ার তুলনায় ট্রেনের ভাড়া অনেক কম। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ননএসি বাসের ভাড়া ৩৭০ থেকে ৪২০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া সর্বনিম্ন ৮৫০ টাকা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবি মো. মিজান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। তিনিই চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সাথে কক্সবাজারের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই যোগাযোগব্যস্থার জন্য আজ কক্সবাজারে খুশির দিন। তাছাড়া কক্সবাজারের সাথে রেল যোগাযোগ এবং যাতায়াত ভাড়া বাসের তুলনায় অনেক কম। এক সময় যাত্রীদের জিম্নি করে বাসওয়ালারা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করতো। এখন সেই জিম্নিদশা থেকে আমরা মুক্ত হলাম।