28.3 C
Chittagong
বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদলিডজালিয়াতিতে ‘ভুল’ স্বীকার এবং হুমকির জন্য ‘ক্ষমা’ চাইলেন সিএইচডিএস’র পরিচালক (অডিওসহ)

শুধরে নেওয়ার সুযোগ চাইলেন রিয়াদ রহমান

জালিয়াতিতে ‘ভুল’ স্বীকার এবং হুমকির জন্য ‘ক্ষমা’ চাইলেন সিএইচডিএস’র পরিচালক (অডিওসহ)

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি তিন অধিদপ্তরের স্বাক্ষর ও স্বারক জাল করে ভুয়া অনুমতিপত্র তৈরি করাকে ‘ভুল’ বলে স্বীকার করেছেন সিএইচডিএস’র পরিচালক রিয়াদ রহমান। একই সাথে ক্লিক নিউজ বিডি’র প্রতিবেদককে হুমকি দেওয়ায় ক্ষমাও চেয়েছেন।

মুঠোফোনে রিয়াদ রহমান ক্লিক নিউজের সম্পাদককে জানান, আমি সলভড করার জন্য বলেছি, আলোচনা করার জন্য বলেছি। হুমকি দিতে বলি নাই। সিএইচডিএস’র পক্ষে যদি কেউ আপনাকে হুমকি দেয় তাহলে ক্ষমা চাইছি।

এর আগে কয়েক দফা মুঠোফোনে কল করে ক্লিক নিউজের এই প্রতিবেদককে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ করে তিনি বলেন, আমাদের যদি ভুল হয়ে থাকে ভুলগুলো শুধরে নিব। নতুন করে সব ডক্যুমেন্ট রেডি করবো।

প্রতিত্তোরে ক্লিক নিউজের প্রতিবেদক বলেন, আমাদের কাছে কিছু তথ্যছিল আমরা সেই তথ্যগুলো নিয়ে কাজ করেছি। আপনারা নতুন করে সব ডক্যুমেন্ট ঠিকঠাক করলে আমি আপনাদের নিয়ে পজেটিভ নিউজ করবো।

উল্লেখ্য, সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া অনুমোদনের কাগজ তৈরি করে ডিপ্লোমা ইন নাসিং ও সার্টিফিকেট ইন মেডিক্যাল টেকনোলোজি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিএইচডিএস মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টার।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৬ টিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জালের মতো বেশ কয়েকটি শাখা খুলে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং, সার্টিফিকেট ইন মেডিক্যাল টেকনোলোজি,প্যারামেডিকেল, ফিজিওথেরাপি, রেডিওলোজি, প্যাথলজি, ডেন্টাল, ফার্মেসি, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, এলএমএফ ও ডিএমএস সহ নানান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিএইচডিএস মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টার নামের একটি স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছিলো কোটি কোটি টাকা। শুধু তাই নয়-এসব জাল সনদ জমা দিয়ে সরকারি একটি হাসপাতালে ২৬ জন শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপও করিয়েছে সিএইচডিএস।

দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষ সিএইচডিএস মেডিকেল সেন্টার নামে এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে তিন পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন করে ক্লিক নিউজ বিডি।

প্রতিবেদনটি ব্যপক ভাবে আলোচিত হলে নানানভাবে ক্লিক নিউজের প্রতিবেদককে আলোচনার মাধ্যমে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন রিয়াদ রহমান। ম্যানেজ করতে না পেরে প্রতিবেদন সরিয়ে নিতে নানাভাবে নানা হুমকি দেওয়াসহ শুরু করেন তিনি।

ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরির আগে তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজনে কয়েকদফা এই প্রতিবেদক কথা বলেন সিভির সার্জন চট্টগ্রাম, তত্বাবধায়ক জেনারেল হাসপাতাল চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ (শর্ট কোর্স) আব্দুর রাজ্জাক মিয়া‘র সাথে।

সংশ্লিস্ট সবাই সিএইচডিএস’র অনুমোদনপত্রচি জাল ও ভুয়া বলে মন্তব্য করেন।

ক্লিক নিউজ বিডি’র হাতে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. শাহ নেওয়াজের স্বাক্ষরিত একটি অনুমোদপত্র (তারিখ ২৫/২/২০২১ ইংরেজি, স্বারক নং-স্বাঃঅধিঃপ্রশাঃ/বিবিধ সার্কুলার/২১২/২০২১) দেখার পর অনুমোদনপত্রটি জাল বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী। অনুমোদনপত্রে স্বারকের লিখার ধরণ ও একই পত্রে এক ব্যক্তির দুই ধরনের স্বাক্ষর হওয়ায় এই মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগেও সাক্ষর জালিয়াতি করার অভিযোগে আমরা একজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি এবং তার বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করা হয়েছে।

২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পরিচালক (কারিকুলাম) মোঃ আব্দুর রেজ্জাক স্বাক্ষরিত প্রাথমিক পাঠদানের একটি অনুমতি পত্র যার স্বারক নং বাকাশিবো/ ক (স্বাঃপ্রঃ)/২০২১/৪৫৭। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন মোঃ আব্দুর রেজ্জাক।

২০১৪ সালে সরকারি চাকরি থেকে মোঃ আব্দুর রেজ্জাক অবসর গ্রহণ করলে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি এই অনুমতি পত্রে স্বাক্ষর করেন কি করে? এমন প্রশ্ন করে খোদ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তা।

২০২০ সালের পর এই ধরণের শিক্ষা কারিকুলামের কোনো অনুমতি কারিগরি শিক্ষাবোর্ড দেয়না বলে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ (শর্ট কোর্স) আব্দুর রাজ্জাক মিয়া। তিনি বলেন, এটা আমাদের কোনো অনুমোদন নয়। এছাড়া ২০২০ সালের পর বোর্ড কোনো মেডিকেল প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয় নাই। কারণ মেডিকেল বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও একই আদেশে কখনোই সার্টিফিকেট ইন মেডিকেল টেকনোলোজি এবং ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলোজি কোর্স অনুমোদন হয় না। মোঃ আব্দুর রেজ্জাক অনেক আগেই সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, যারা এ ধরণের প্রতারণা করছে তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

সিএইচডিএসের অনুমতিপত্রটি জাল বলে নিজেই স্বীকারোক্তি দেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের তৎকালিন (২০১১ সাল) পরিচালক (কারিকুলাম) মোঃ আব্দুর রেজ্জাক। তিনি বলেন, আমি অবসরে গেছি অনেক আগে। সিএইচডিএস’র অনুমতি পত্রটি ভুয়া। মোঃ আব্দুর রেজ্জাক’র স্বীকারোক্তির একটি অডিও রেকর্ড ক্লিক নিউজ বিডি’র কাছে সংরক্ষিত আছে।

অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রসপেক্টাস ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জমা দেওয়া কাগজপত্রে ব্যবহৃত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (জয়েন স্টক কোম্পানি নিবন্ধন নং ৫২৮১৯) নিবন্ধন নম্বরটিতে সিএইচডিএস নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে সনদটিতে থাকা বার কোডটি স্ক্যান করলে সোসাইটি অফ ওয়াল্ড হিউম্যান রাইটস ভিশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। যা নিবদ্ধিত হয় ১৮ নভেম্বর ২০২০ সালে আর জয়েন স্টক কোম্পানি নিবন্ধন নং এস-১৩৪৫৬।

ভুয়া সনদে সিএইচডিএস’র শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ইলিয়াস চৌধুরী বলেছিলেন, মাঠ পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। কোনো প্রতিষ্ঠান ভুয়া অনুমোদনপত্র তৈরি করে থাকলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই সম্পকেৃত আরও সংবাদ
কথিত নেতা আজাদ রহমান যুবলীগের কেউ না!

তিন মন্ত্রণালয়ের জাল সনদে চলছে সিএইচডিএস মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টার

অডিও লিংক

সিএস

সর্বশেষ