31.4 C
Chittagong
বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদঅর্থনীতিতেলের পর পানিতেও আগুন, ডেঙ্গুর জেরে বাড়ানো হচ্ছে ডাবের দাম!

তেলের পর পানিতেও আগুন, ডেঙ্গুর জেরে বাড়ানো হচ্ছে ডাবের দাম!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

তেলের পর এবার আগুন লেগেছে ডাবের পানিতেও। হাত দিলেই জ্বলেছে ভোক্তাদের। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির জেরে প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতিদিন দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে জেরারও শেষ নেই। বিক্রেতার কেনার অজুহাত ও গোঁয়ারামিতে শেষমেশ তাদের দামেই কিনতে হচ্ছে। ডাব ব্যবসায় সুদিন ভেবে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি ডাব বিক্রিতেও নেমেছে ওষুধ ফার্মেসির ব্যবসায়িরা। দোকানের সামনে ৫/৬ টি ডাব রেখে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দোকানের পিছনে মজুত রেখেছে ডাব। ফার্মেসি ছাড়াও ডাব ব্যবসায় সুদিন চলছে বুঝতে পেরে অনেক মৌসুমী ব্যবসায়িও নেমেছে ডাব বিক্রিতে।

সরজসিনে দেখা গেছে, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, পার্কভিউ হসপিটাল, ন্যাশানাল হসপিটাল, ম্যাক্স হসপিটালসহ ক্লিনিকগুলোর সামনে ডাব বিক্রিতে গলাকাটা দাম নিচ্ছে দোকানিরা। ওই স্থানগুলোতে পাশাপাশি কয়েকটি ডাব বিক্রির দোকান আছে। কিন্তু দামের দিকে সবাই একজোট। ফলে ডাব কিনতে আসা মানুষদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়িদের অভিযোগ, ডেঙ্গুর সুযোগ নিয়ে খুচরা ডাবের ব্যবসায়িরা অতিরিক্ত লাভ করছেন। আর খুচরা ব্যবসায়িদের অভিযোগ ডাবের দাম বাড়াচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়িরা।

মা ও শিশু হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনের অভিযোগ, ডেঙ্গুর তালে তালে হাসপাতালের সামনে ডাব বিক্রেতাদেরও দামের তাল বেড়েছে। দামে কোনো সেক্রিফাইজ নাই। যে দাম হাঁকাচ্ছে সে দামেই কিনতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ডাবের ওপর ডেঙ্গু ‘ভর’ করেছে।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে ধরা পড়ে ডাবের দাম বাড়ার কারণ। দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রোগীর চাপে হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে যেসব ফলের ওপর রোগীরা ভরসা করেন, সেগুলোর দাম বেড়েছে। এই তালিকায় প্রথম সারিতে আছে ডাব। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালগুলোর সামনে ডাবের দোকান বেড়েছে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা ডাবের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ২০২২ সালে তৈরি গাইডলাইনে রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খেতে বলা হয়েছে। এর পরিমাণ দৈনিক ৮ থেকে ১০ গ্লাস। তরল খাবারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে দুধ, ফলের রস, ওরস্যালাইন, বার্লি, ভাতের মাড় বা ডাবের পানির কথা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডাবের পানি শরীরের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত পান করলে ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। আর গাইডলাইনে কখনোই বলা হয়নি বেশি পরিমাণে ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। ঘাটতি পূরণে যে কোনো স্বাভাবিক পানীয় বা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে ৯৫.৫ শতাংশ পানি, ০.০৫ শতাংশ নাইট্রোজেন, ০.৫৬ শতাংশ ফসফরিক এসিড, ০.২৫ শতাংশ পটাশিয়াম, ০.৬৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.৫৯ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড থাকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, ন্যাশানাল হাসপাতাল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাসপাতালের ফটকের সামনেই ডাব নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। রোগীর স্বজনরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যাক্স হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতা বলেন, ১৫০ টাকা দিয়ে জায়গা থেকে ডাব কিনতে হয়। এরপর গাড়ি ভাড়া, রয়েছে ধোলাই খরচ, জায়গা ভাড়া। সব মিলিয়ে ১৮০/২০০ টাকায় বিক্রি না করলে পত্তা মিলেনা। ডাব ক্রয়ের রশিদ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ি, আমাদেরকে রশিদ দেয় না।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ডাবের সংকট দাবি করে ভোক্তাদের থেকে প্রতিটি ডাব ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতা। ওষুধের ফার্মেসির দোকানিরাও ডাব ব্যবসা করছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রাইসা মেডিকেল হল নামের ফার্মেসিতে কয়েক শ’ ডাব মজুত পাওয়া গেছে। দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ব্যবসা করলে অবশ্যই লাভ করবেন। তবে একটা উপলক্ষ সামনে এনে দাম বাড়িয়ে দেবেন- সেটা হতে পারে না। ৪০০ টাকা দিয়ে বাংলাদেশের দুটি ডাব কিনতে হবে, আমরা কি সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছি?

তিনি বলেন, ডাব তো জাহাজে করে বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করতে হয় না কিংবা ডলারে পেমেন্ট করে আনতে হয় না। তাহলে দাম এত বাড়বে কেন?। ডেঙ্গুকে পুঁজি করে আপনারা প্রতিটি বাজার জিম্মি করছেন। এভাবে চলতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভাবতে পারিনি ডাবের জন্য আমাকে এখানে বৈঠক করতে হবে।

সিএস

সর্বশেষ