
চিহ্নিত এবং সর্বজন স্বীকৃত রাজাকার ছিলো মিরসরাইয়ের আব্দুল হান্নান। তার ৬ সন্তানের মধ্যে ১জন আবুল হাসনাত প্রকাশ হাবিব খান। ২০০৮—১২ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সে সময়ে তিনি শিবিরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। কথিত আছে, আবুল হাসনাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযয়ে বাইতুল মাল সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। পরে রাজাকারের লেবাস ঢাকতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের রাজনীতি শুরু করেন। যোগ দেন তারইপত্র পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলের পিএস হিসেবে। রাজাকার আব্দুল হান্নানের পুত্র আবুল হাসনাত (হাবিব খান) গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজমের একটি ইউনিট।
৯ সেপ্টেম্বর, শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় মিরসরাই থানাধীন ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মাস্টারের বাড়ির সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যদিও গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মিরসরাই থানার ওসি (তদন্ত) খায়রুল ইসলাম। তবে ক্লিক নিউজ বিডি’র তথ্যানুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে ,হাবিব খানকে গ্রেফতার করে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহসীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিরসরাই থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা ক্লিক নিউজকে নিশ্চিত করেন, গতকাল রাত ১টার দিকে ৯৯৯ এ ফোন করে জানান, ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মাস্টারের বাড়ির সামনে কিছু লোক অবস্থান করছেন যা সন্দেহজনক। এমন সংবাদ পেয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন এসআই মহসীনকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি ঘটনাস্থলে যান।
নাম প্রকশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, মিরসরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় আবুল হাসনাত (হাবিব খান) গ্রেফতার করে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, হাবিব খানকে গ্রেফতারের পর ১২ নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনুর বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। এর আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান মাহফুজুল হক জুনু। আটককৃত হাবিব খান ও মামলার অন্যতম আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন মাস্টারের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, চুরি ও ভাং চুরের ঘটনায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। হাবিব খানের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে প্রবাসী সিআইপি ফখরুল ইসলাম খাঁনের করা একটি মামলাও বর্তমানে বিচারাধীন।
এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর একই অভিযোগে আবুল হাসনাত ওরফে হাবিব খানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আশরাফুল কালাম মিঠু নামে একজনকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। অভিযোগে হাবিব খানকে রাজাকার পরিবারের সন্তান, সাবেক শিবির ক্যাডার এবং মিঠুকে ছাত্রদলের সাবেক অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিষয়টি মিমাংসা হয়।
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ পুত্র রুহেলের পিএস আবুল হাসনাত প্রকাশ হাবিব খানের বাবা আব্দুল হান্নানকে রাজাকার বলে চিহ্নিত করেছেন ১৩ নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির নিজামী, ৭ নং ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন, ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুলসহ অনেকেই। আব্দুল হান্নান সম্পর্কে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান বলেন, স্থানীয় সবাই জানে আব্দুল হান্নান রাজাকার ছিলেন। শুধু তিনিই নন পরিবারের কাজল নামে আব্দুল হান্নানের এক ভাতিজাও পাকহানাদার বাহিনীর সাথে যুক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন।
জানা যায়, রাজাকার আব্দুল হান্নানের ৬ সন্তানের মধ্যে ৫ মেয়ে ১ ছেলে আবুল হাসনাত। তিনি ২০০৮—১২ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সে সময়ে তিনি শিবিরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। কথিত আছে, আবুল হাসনাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযয়ে বাইতুল মাল সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
পরবতীর্তে নিজের নাম আবুল হাসনাত পরিবর্তন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাবিব খান নামে পরিচিতি শুরু করেন। নাম বদল করে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করে নজর কাড়েন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলের।
পরবর্তী সময়ে রুহেলের ‘আপন’ মানুষ হয়ে যান রাজাকার পুত্র হাবিব খান। পিতার এবং নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বাগিয়ে নেন ব্যক্তিগত সহকারী নামের পিএস পদটিও।
রাজাকার পুত্রকে মুক্তিযোদ্ধা পুত্র নিজের ব্যক্তিগত সহকারী বানিয়ে রাজনীতির মাঠে দপিয়ে বেড়ানোকে মেনে নিতে পারেননি মিরসরাইয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির একটি পক্ষ।
মন্ত্রীপুত্র হওয়ার সুবাধে রুহেলকে কিছু বলারও সাহস হয়নি। যদিও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মিরসরাইয়ে ক্ষমতাসীন দল আয়োজিত এক শোক সভায় মন্ত্রীপুত্র রুহেল তার বক্তব্যে বলেছিন, তার পিতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন জামাত-বিএনপিকে পেট্রোনাইজ করতেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নে চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্যে তার পিতা সহযোগিতা করতেন।
এনিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হলে মন্ত্রীপুত্র রুহেল ক্ষোভে নিজের বক্তব্যকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করে নিজের এবং পিতার ইমেজ ধরে রাখতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদকে বিকৃত সংবাদ ও সাংবাদিকতাকে অপসাংবাদিকতা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালান। কিন্তু এবার নিজেই প্রমাণ করলেন-মুখে স্বাধীনতা আর বুকে রাজাকার!
দলীয় সুত্র জানায়, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মাহবুবুর রহমান রুহেলের পিএস হিসেবে রাজাকার পুত্র হাবিবের পরিচিতি দেওয়া বা নিয়োগের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমালোচিত হলেও নেতার ইমেজের কথা চিন্তা করে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের অনেক কর্মী বলেন, রুহেল ভাই আমাদের আপকামিং লিডার। আমরা চাইনা তিনি কোনো ভাবেই সমালোচিত হোন। সে কারণে সব জেনেও চুপ করে আছি।
হাবিব খানের বাবা আব্দুল হান্নান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন এমন অভিযোগের বিষয়ে মাহবুবুর রহমান রুহেল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, আপনি রি চেক করে দেখেন। মিরসরাইয়ের রাজাকারের তালিকায় আব্দুল হান্নানের নাম আছে এমন কথা বললে তিনি বলেন, ইমপসিবল। এ রকম কিছু হওয়ার কথা না।
সিএস