
টার্গেট করে অপহরণ, তারপর মুক্তিপণ। আবার প্রত্যাশা অনুযায়ী টাকা না পেলে রাতভর ধর্ষণ, এমন ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব মিলেছে কক্সবাজারে। আর এই ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশের এসআই ইকবাল। তার শ্যালক মুন্নাসহ অন্য ৭/৮ জন সহযোগী নিয়ে গড়ে তোলা হয় সিন্ডিকেটটি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকরা তাদের মূল টার্গেটে থাকে।
কক্সবাজার পৌর শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় এই সিন্ডিকেটের দুটি সুরক্ষিত ও গোপন আস্তানায় চলত তাদের কর্মকাণ্ড। অপহরণ করে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হত। এরপর সেখান থেকে তৈরি হত মুক্তিপণ আদায়ের ছক।
শুক্রবার (১৯ মে) কক্সবাজার র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর অভিযান পরিচালনা করে ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের আস্তানার সন্ধান পায়।
পরবর্তীতে রাতভর এসব আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে প্রথমে কলাতলি হতে চক্রের দুই সদস্যকে এবং পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুগন্ধা এলাকার অপর গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে চক্রের প্রধান চাকরিচ্যুত এসআই এসএম ইকবাল পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চক্রের প্রধান ইকবাল পারভেজ ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়েন। এতে দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি চাকুরিও হারান তিনি। চাকরি থেকে বরখাস্ত ও কারাগার থেকে বের হওয়ার পর এসআই (বরখাস্তকৃত) ইকবাল তার শ্যালক মুন্নাসহ অন্য ৭/৮ জন সহযোগী নিয়ে গড়ে তোলেন অপহরণ বাণিজ্যের রমরমা এ সিন্ডিকেট।
র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০) চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন মাইতুল সরকারবাড়ি এলাকার মৃত এরশাদ আলমের পুত্র। ২০২১ সালে ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ সূত্র।
অন্যদিকে গ্রেপ্তার এমটি মুন্নার (৩০) বাবার নাম মো. ইউনুস এবং গ্রেপ্তার মো. ইউসুফের বাবার নাম মৃত আব্দুল করিম; উভয়ের বাড়ি কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডস্থ নতুন বাহারছড়া এলাকায়।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ মে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে নিখোঁজ হন ঢাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম। পরবর্তীতে একটি মোবাইল নম্বর হতে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের।
কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরও করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্য। স্বামীর উপর চলতে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক বর্বর নির্যাতন।
অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা বিকাশে ২ লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদেরকে ছাড়া হয়নি, অপহরণকারীদের দাবি আরও অনেক বেশি। বেদম মারধরের পাশাপাশি চাহিদা মতো মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে স্বজনরা বিষয়টি র্যাবকে অবহিত করলে অভিযান শুরু করেন তারা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘কক্সবাজার কেন্দ্রিক অপহরণ-মুক্তিপণ সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে র্যাবের যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, তারই অংশ হিসেবে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক মহোদয়ের নির্দেশে আমরা এ অভিযান পরিচালনা করেছি।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি, তদন্তের স্বার্থে যা এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ চক্রের অন্য সদস্যদেরকেও শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। কক্সবাজারে অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সিএস