
* ডিলার,দোকানিদের একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বাজেট ঘোষণার আগেই তামাক পণ্যের (সিগারেট) কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে নগরীতে। আর এ প্রভাব পড়ছে বিক্রেতাসহ ক্রেতাদের ওপর। প্রতি পিস সিগারেটে এক টাকা বেশি নিচ্ছেন দোকানিরা। বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতাদের সাথে দোকানিদের তর্কাতর্কি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আবার অনেক দোকানির কাছে মিলছে না সিগারেট। অভিযোগ রয়েছে আরও দাম বাড়ানোর পায়তারা করে সিগারেট মজুদ করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
তবে দোকানিরা বলছেন, নিত্যদিন বিক্রির জন্য চাহিদামত সিগারেট তারা পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় বিক্রির জন্য পাইকারি দোকান থেকে তাদেরকে বাড়তি দাম দিয়ে সিগারেট কিনতে হয়। তাই ক্রেতাদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
দেখা গেছে, ব্রিটিশটবাকো কোম্পানির গোল্ড লিফ, বেনসন এক টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া নেভী, স্টার ফিল্টার, মেরিস, ডারবি ও শেখ সিগারেটও একটাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে মন্ড, ওরিস ইত্যাদি সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও বাড়তি দামের বিষয়ে এখনও ক্রতারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।
খুচরা দোকানিদের অভিযোগ সিগারেট কোম্পানির ডিলারদের বিরুদ্ধে। বাজেট ঘোষণার আগে মুনাফালোভী ডিলাররা অধিক মুনাফার লোভে সিগারটের কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করেছে। চলতি মাস থেকে এ সংকট চলছে। সেলসম্যানদের কাছে দশ পেকেট চাইলে দিচ্ছে পাঁচ পেকেট। বাকি পাঁচ পেকেট বাজারে পাইকারি দোকানিদের কাছ থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
একাধিক সুত্র জানায়, বাজেটকে সামনে রেখে ডিলার ও মাঠ পর্যায়ে সেলসম্যানেরা আর্থিক সুবিধা নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সিগারেট সরবরাহ করছে। এতে উভয় পক্ষ লাভবান হচ্ছেন, ঠকছেন ক্রেতারা। কোম্পানির পক্ষ থেকে সিগারেটের কার্টন প্রতি অতিরিক্ত নতুন কোনো দাম সংযোযন করা হয়নি। তারপরও খুচরা ব্যবসায়ীদের জানানো হচ্ছে সংকটের কথা। ফলে নিত্যদিনের সিগারেটে বিক্রির চাহিদার যেগান দিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, ডিলাররা ভ্যানগাড়িযোগে রাস্তায় ভাসমান খুচরা দোকানিদের কাছে সিগারেট পাইকারিতে বিক্রি করতো। মে মাসের আগেও চাহিদামত সিগারেট আমরা তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ মে মাস থেকে আমাদের চাহিদামত সিগারেট আমরা পাচ্ছি না। জানতে চাইলে বলে, সিগারেটের সরবাহ কম। তাই আগের মত সিগারেট দেওয়া যাচ্ছে না।
যদিও খুচরা দোকানিদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ কোম্পানি ডিলাররা। তারা বলছেন, মূলত বাজেটকে ঘিরে দোকানিরা সিগারেট মজুত রেখে সংকটের কথা বলছে।
চৌমুহনীর ভাসমান দোকানি জানে আলম ক্লিকনিউজকে বলেন, এক পেকেট গোল্ড লিফ সিগারেট ২২৪ টাকায় কিনতাম। আজকে কর্ণফুলী বাজার থেকে পেকেট ২৪০ টাকা দরে কিনেছি। এখন সিগারেটের গাড়ি থেকে আগের মত সিগারেট দিচ্ছে না। মে মাস থেকেই এমন সংকট চলছে।
দোকানিদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে হালিশহর এরিয়ার ডিলার জাওয়াদ এন্টারপ্রাইজের সাথে যোগাযোগ করা হলে সেলসে দায়িত্বরত অপু নামের এক কর্মকর্তা ক্লিকনিউজকে জানান, আমাদের কাছে সিগারেট নেই, সিগারেট সংকট এগুলো সব বানোয়াট কথা, গুজব। আগে আমরা ৩০ লাখ টাকার মাল সেল করতাম। এখন ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মাল সেল করছি। সামনে বাজেট প্রিয়ড’র আর দশ দিন বাকি আছে। হয়তো দোকানদাররা বেশি মাল নেওয়ার জন্য উৎফুল্ল হয়ে আছে।
অপুর দাবি, হালিশহর এরিয়ায় তার আওতায় সাত হাজার দোকান রয়েছে। যেখান থেকে কমপ্লেইন আসে আমরা সাথে সাথে লোক পাঠিয়ে সমাধান করি। কোন দোকানে কি সমস্যা আছে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু এ ধরণের কমপ্লেইন এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ করেনি। দোকানিদের যতটুকু দরকার ততটুকু মালই দেওয়া হচ্ছে। হয়তো বাজেটকে সামনে রেখে তারা মাল রিজার্ভ করছেন। আর যেগুলো খুচরা বিক্রি করছেন সেগুলো শলাকায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। কোন দোকানদার অভিযোগ করেছে তার নাম ও দোকানের নাম প্রতিবেদকের কাছে জিজ্ঞেস করেন।
ক্রেতারা বলছেন, রোজার আগে ভোক্তার অভিযান প্রশংসনীয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়েছে। কথা বার্তা ছাড়াই দোকানিরা ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে সিগারেট বিক্রি শুরু করেছে। আরেক দিকে ডিলাররা বাজিমাত, আমরা ক্ষতিতে। এই বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের কি কোনো ভূমিকা নেই। যদি থাকতো তাহলে দোকানি বলেন আর ডিলার বলেন, কেউই এমটি সাহস করতো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তাধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ক্লিকনিউজকে বলেন, এ বিষয়ে তো আমি কিছুই জানিনা। মোড়কের মূল্য থেকে সিগারেটে যে বাড়তি দাম নিচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিএস/জেইউএস