28.7 C
Chittagong
বুধবার, ৭ জুন ২০২৩
প্রচ্ছদবন্দর নগরীনিজস্ব পার্কিং নেই উৎসব সুপার মার্কেটের, লাখো মানুষের ভোগান্তি!

নিজস্ব পার্কিং নেই উৎসব সুপার মার্কেটের, লাখো মানুষের ভোগান্তি!

দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকে অ্যাম্বুলেন্সও

  জালালউদ্দিন সাগর

নগরীর পাঁচলাইশ-প্রবর্তক মোড় সংলগ্ন সড়কে সম্প্রতি গড়ে ওঠা চেইন সুপার স্টোর ‘উৎসব’র নিজস্ব কোনো পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারী ও আবাসিক এলাকার সাধারণ মানুষদের।

উদ্বোধনের পর চার মাসে উৎসবে পণ্য ক্রয় করতে আসা ক্রেতাদের যত্রতত্র গড়ি পার্কিংয়ে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতেও টনক নড়েনি মার্কেট কর্তৃপক্ষের। দিনের দিন এই ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলেছে কয়েকগুণ বেশি। অপরদিকে নগর ট্রাফিক বিভাগ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করলেও কর্ণপাত করছেন না তারা-এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের এক আত্মীয় ‘উৎসব’ সুপার স্টোরের ব্যবসায়ীক পার্টনার। সে ক্ষমতা দেখিয়ে জনভোগান্তির কোনো অভিযোগই তারা কর্ণপাত করছেন না।

চলতি বছর ১০ মার্চ, বৃহস্পতিবার নগরীর পাঁচলাইশে উদ্বোধন করা হয়েছিল অত্যাধুনিক শপিং মল উৎসব সুপার মার্কেটটি।

উৎসব সুপার মার্কেট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মার্কেট উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বারকোড রেস্টুরেন্ট গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল হক।

এসময় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর সহিদুল হক, ডিরেক্টর হাসান মাহমুদ ও উৎসব সুপার মার্কেটের হেড অব অপারেশন সাদেক আলি উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনের সময় পতিষ্ঠানের পরিচালকরা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও গ্রাহক সেবার মান সর্বোচ্চ পর্যায় নিশ্চিতের কথা বললেও বর্তমান চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।

ছোট পরিসরে গড়ে ওঠা নগরীর সর্ববৃহৎ এই সুপার মার্কেটের জন্য প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পাঁচলাইশ-প্রবর্তক সড়কে যাতায়াত করা লাখ লাখ মানুষকে।

১৫ মে, সোমবার সরজমিনে দেখা গেছে, উৎসবে আসা ক্রেতাদের যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে রাস্তার উপর ডিভাইডার বসিয়েছে নগর ট্রাফিক। উৎসব সুপার মার্কেটের কারণে মূল সড়কের এক পাশ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় নিয়মিত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

দেখা গেছে, ক্রেতাদের জন্য উৎসবের নিজস্ব কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে মূল সুপার মার্কেটের দুই পাশের ফুটপাত জুড়ে গাড়ি পার্কিং করতে বাধ্য হন ক্রেতারা। যে কারণে যানজট সৃষ্টি হয় মূল সড়কসহ আবাসিক এলাকামুখী সড়কেও।

উৎসব সুপার মার্কেট পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা পরিচয়ে এক পথচারী প্রতিবেদকে বলেন, পাচলাইশ-প্রবর্তক ও মেডিকেলমুখী এই সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ও ব্যক্তিগত পরিবহন যাওয়া আসা করে সড়কটি ধরে। সেই সাথে রোগী পরিবহণকারী অ্যাম্বুলেন্স তো রয়েছেই। এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে কোনো রকম পার্কিং ব্যবস্থা ছাড়া এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হয় কিভাবে?

সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য পরিবহনের চলকেরা জানান, ব্যস্ততম এ সড়কে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়াই উৎসব সুপার মার্কেটটি নির্মাণ করেছে। প্রতিদিন অসহনীয় যানযটে আমাদের পড়তে হয়। এর কারণে যাত্রীরাও বিরক্ত। এছাড়া রোগীবাহি অ্যাম্বুলেন্সকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন।

চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দেখে মনে হচ্ছে তাদের বাপ দাদার বাড়ির উঠান। পরিকল্পনা ছাড়া সুপার মার্কেট দিয়ে ক্ষমতাবলে তাদের ক্রেতাদের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদের এহেন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদের ভাষা যেন কারও নাই। আমরা বলেন আর প্রশাসন বলেন, সবাই যেন তাদের কাছে জিন্মি। তা না হলে এরকমটা হতে পারতনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) উপপুলিশ কমিশনার জয়নাল আবেদিন টিটু বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আমার উৎসব কর্তৃপক্ষের সাথে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি। তরপরও তারা নিজস্ব কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করায় উৎসবের সামনে ডিভাইডার বসাতে বাধ্য হয়েছি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উৎসব সুপার মার্কেটে গেলেও কর্তৃপক্ষের কেউ না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সিএস

সর্বশেষ